আওয়ার ছফা অ্যান্ড আজাদ

sofaazad
ছবিতে পাশাপাশি হুমায়ুন আজাদ ও আহমদ ছফা

আমি ছফা আজাদ দুইজনরেই পছন্দ করি–করতাম। আজাদের বাসায় একাধিকবার গেছি। মেইনলি ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্যে। এছাড়াও গেছি। একবার মনে আছে, বিকালের দিকে, বোধহয় ব্রিটিশ কাউন্সিলের দিকে হাঁইটা ওনাদের কলোনি পার হইতেছিলাম আমি আর সাজ্জাদ শরিফ ভাই। তখন আমি সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে উপন্যাস লিখি দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায়– যোগাযোগের গভীর সমস্যা নিয়ে কয়েকজন একা একা লোক। সাজ্জাদ ভাই ভোরের কাগজে আছেন। তো স্যার–স্যার নামেই ডাকতাম ওনারে–আমাদের দেখতে পাইলেন রাস্তায়। বললেন, কী ব্যাপার তোমরা! এখানে কী করছো! ওনার কণ্ঠস্বর, ‘এখানে কী করছো’ ভালো লাগল না আমার।

আমি বললাম, স্যার বিকাল বেলা মেয়ে দেখতে বাইর হইছি!

উনি প্রথমে অপ্রতিভ হইলেন–পরে সপ্রতিভ হইয়া হাইসা ফেললেন। বললেন কী বলো এগুলো, ওরা তো আমাদের মেয়ে! আমি বললাম, হ্যাঁ স্যার, ওদেরই দেখতে বাইর হইছি!

উনি বললেন, চলো, কাজ না থাকলে বাসায় চলো। আমরা ওনার বাসায় গিয়া চা বিস্কুট খাইলাম।

হুমায়ুন আজাদ স্যার সাবলীল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ওনার সঙ্গে নানান জায়গায় দেখা হইত। প্রধানত আজিজ মার্কেট শাহবাগে। উনি সাদা কেডস, নেভি ব্লু জিনস আর সাদা টি শার্ট বা কখনো হাফ শার্ট পইরা আসতেন। আমারে আর সাজ্জাদ ভাইরে পারতপক্ষে ঘাটাইতেন না।

আমি ওনার একটা সাক্ষাৎকারের বই নিয়া একটা আলোচনা লিখছিলাম বাংলাবাজার সাময়িকীতে, ১৯৯৪ বা ৯৫-এ। বইটা যে পড়ি নাই তখনো তার উল্লেখ আছিল আলোচনায়। (সে বই অবশ্য এখনো পইড়া উঠি নাই। পড়মু।) সাক্ষাৎকারদানকারীদের ও ওনার চশমার বর্ণনা, কে কার দিকে চাইয়া আছে প্রচ্ছদে সে সব লিখছিলাম। উনি পইড়া খুশি হইছিলেন। বলছিলেন, তুমি না পড়েই যা লিখেছো, ওরা তা পড়েও লিখতে পারবে না।

ওনার অনেক গল্প আছে, আমার স্মৃতিশক্তি দুর্বল বইলা সব মনে পড়ে না। সাজ্জাদ ভাইয়ের দেখছি অনেক কিছু মনে আছে। ওনারে জিগাইলে আবার আমারও মনে পড়বে। তেমন মনে পড়া ঘটলে আরো লিখব। ছফা-আজাদ দুই জনেরই আদর্শবাদ আছিল। যে যে আদর্শের তার কাছে তাঁর তাঁরটা হয়তো ভালো লাগবে। আমার আদর্শবাদ ওইভাবে কখনোই ছিল না। দুইজনের সঙ্গেই আমি মিশতে পারতাম। তবে ছফা ভাই যেমন পুত্রবৎ জ্ঞান করতেন আজাদ তেমন করতেন না–তিনি জ্ঞান করতেন ছাত্রবৎ। কিন্তু আমি কখনোই তার ছাত্র তো ছিলাম না, বৎও ছিলাম না। কোনো একটা ইন্টারভিউতে আমাদের ফাজিল সম্বোধন করছিলেন আজাদ স্যার। আমরা–অন্তত আমি তাই ছিলাম। এখনও আছি। ভদ্রলোকদের অফাজিল ভদ্রতার মায়রে বাপ!

১৯/৭/২০১৩

2 Comments

Add Yours →

মজা পাইছি গো ভাই, আরেকবার।

Leave a Reply