সমুদ্রে নাইতে নেমেছেন গান্ধি
১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ সরকার বুঝতে পারছিলেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তো ভারতে খুব অত্যাচার করতেছে! অত্যাচারীর দায়িত্ব লাঘব করতে মহারাণীর মহাশাসন শুরু হইলো ভারতবর্ষে। ১৯৩০-এ আইসা রাণী গরীবের প্রধান খাদ্য লবণের উপরে ট্যাক্স বসাইয়া দিলেন। ভূভারতে গরীবের সংখ্যা আগেও বেশিই ছিল—আর লবণ এমনই খাদ্য, তুমি যতো কাঙ্গালের কাঙ্গাল হও, লবণ তোমাকে খাইতেই হবে। অতএব সদাশয় সরকার আইন কইরা লবণের নেটিভ উৎপাদন বন্ধ কইরা দিলেন।
অহিংস বিপ্লবী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি (১৮৬৯-১৯৪৮) কইলেন, ‘ঘিয়ের উপরে, মদের উপরে, তামাকের উপরে ট্যাক্স বসাইলে আপত্তি আছিল না—অবস্থা এমন দাঁড়াইছে বাতাসের উপরে যে ট্যাক্স বসায় নাই সেইটাই আমাদের ভাগ্য। কিন্তু আমরা ট্যাক্স দিব না।’ ব্রিটিশরে চ্যালেঞ্জ করলেন গান্ধি, ‘পারলে আমারে কয়েদ করো।’
এইসব অহিংস হুংকারের পরে গান্ধি লং মার্চের ঘোষণা দিলেন। ঠিক হইলো গুজরাটের আহমেদাবাদ থিকা ডাণ্ডির সমুদ্র পর্যন্ত ৩৮৮ কিলোমিটার (২৪১ মাইল) রাস্তা পায়ে হাঁইটা পার হইবেন তারা। সেইখানে গিয়া গান্ধি নিজেই লবণ বানাইবেন। গান্ধির সঙ্গে যোগ দিল ৭৮ বিপ্লবী। ১৯৩০ সালের ১২ মার্চ থিকা ৬ এপ্রিল হাঁইটা তারা সমুদ্রে পৌঁছলেন। ইতিহাসে এই ঘটনার ইংরাজি নাম দি গ্রেট সল্ট মার্চ।
ক্যামবে উপকূলে আইসা সমুদ্রের পানি জ্বাল দিয়া লবণ উৎপাদন শুরু করলেন গান্ধি আর তার অনুসারীরা। ছবিতে সত্যাগ্রহ ঘোষণার ঠিক আগে দিয়া বাপুজি আরব সাগরের নুন-পানিতে গোছল সারতেছেন। এরপর এক খাবলা দরিয়ার নুনের সঙ্গে ডাঙার মাটি মিশাইয়া ডাক দিলেন লবণ সত্যাগ্রহের।
সারা ভারতে ছড়াইয়া পড়লো নুনের আন্দোলন। নুনাবতার ব্রিটিশ রাজ এতসব সহ্য করবেন তা হইতে পারে না। তিনি মে মাসের ৫ তারিখে গান্ধিরে গ্রেপ্তার করলেন।
পরে আন্দোলনের ঘনঘটায় আপসহীন ব্রিটিশরাজ পর সালের ২৬ জানুয়ারি ছাইড়া দিলেন গান্ধিরে। ৪ মার্চ গান্ধির সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হইল ব্রিটিশ সরকার—ঠিক হইল লন্ডনে গোল টেবিল হবে। সেইখানে প্রজাদের দুঃখের কারণ নিয়া শান্তিমতো অনেক আলোচনা করা যাবে!
লিংক: Original footage of Gandhi and his followers marching to Dandi in the Salt Satyagraha
(ছুটির দিনে, প্রথম আলোতে ২০০১ বা ২০০২ সালে লেখাটি শুদ্ধ ভাষায় প্রকাশিত হইছিল, এখানে ২০০৬ সংস্করণ)