“আমি সেদিকে আবার তাকালাম, কিন্তু একবারই যথেষ্ট ছিল। শিখাগুলি বের হয়ে আসছিল একটা মানব অবয়ব থেকে। তার দেহ শুকিয়ে ছোট হয়ে আসছিল, মাথা পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছিল। বাতাসে ভাসছিল মানুষের মাংস পোড়ার গন্ধ; মানুষ অবিশ্বাস্য দ্রুত পোড়ে। সামনে জড়ো হতে থাকা ভিয়েতনামিজদের আহাজারি শুনতে পাচ্ছিলাম। এত ধাক্কা খেয়েছিলাম যে কাঁদতে পারছিলাম না, বুঝতে পারছিলাম না নোট নেবো কিনা, কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করবো কিনা, এত হতচকিত হয়ে গিয়েছিলাম যে কিছু ভাবতেও পারি নি…যখন তিনি পুড়ছিলেন মাংসপেশীর কোনো নড়াচড়া ছিল না তার, কোনো শব্দ করছিলেন না তিনি, তার অবিচলতা তার চারপাশের হাহাকারকারী জনতার সম্পূর্ণ বিপরীত একটা অবস্থান হয়ে উঠেছিল।”
—ডেভিড হালবারস্টাম, নিউ ইয়র্ক টাইমস, ১৯৬৩
আমেরিকান মদদপুষ্ট দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নগো দিন্হ দিয়েম (১৯০১-১৯৬৩)-এর বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নিধনের বিরুদ্ধে এটি ছিল সন্ন্যাসী থিচ কুয়াং দুক (১৮৯৭-১৯৬৩)-এর একটি জ্বলন্ত প্রতিবাদ।

৮ মে ১৯৬৩ তারিখে দিয়েম সরকারের সেনারা হু শহরে একটি বৌদ্ধ সমাবেশ ছত্রখান করতে গিয়ে ৯ সন্ন্যাসীকে হত্যা করে। সরকার দায় চাপায় কমিউনিস্টদের ওপর। এ ঘটনার পর জুনের ১১ তারিখে আর এক দল সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসীনি শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় একটি হালকা নীল অস্টিন গাড়ির পিছু পিছু সায়গনের জনাকীর্ণ রাস্তায় হাজির হয়। তারা যেন ইঞ্জিনে সমস্যা হয়েছে এমন ভান করে গাড়ি থামিয়ে দেয় রাস্তায়। সন্ন্যাসীরা দ্রুত গাড়িটিকে ঘিরে একটি বৃত্ত তৈরি করে। গাড়ি থেকে নেমে আসেন ৬৭ বছর বয়সী থিচ কুয়াং দুক। বৃত্তের মাঝখানে পদ্মাসনে ধ্যানের ভঙ্গিতে বসে পড়েন তিনি। অন্য একজন সন্ন্যাসী গাড়ি থেকে পাচ গ্যালনের কনটেইনারভর্তি গ্যাসোলিন বের করে তার গায়ে ঢেলে দেন। তিনি পদ্মাসনে অনড় থেকে ম্যাচের কাঠি দিয়ে আপন শরীরে অগ্নিসংযোগ করেন।
ভিয়েতনামের সে সময়ের ফার্স্ট লেডি মাদাম নু এ ঘটনার পর মন্তব্য করেছিলেন, তিনি এমন আরেকটা মংক বারবিকিউ শো দেখতে পেলে হাততালি দেবেন। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এ ঘটনায় এত মর্মাহত হয়েছিলেন যে ওভাল অফিসে কুয়াং দুকের ছবি টাঙিয়েছিলেন। আমেরিকা দিয়েম সরকারের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ায় সব রকম সহযোগিতা রদ করে। এবং বছরশেষে কেনেডি সরকারের গোপন সম্মতির ভিত্তিতে ভিয়েতনামিজ জেনারেলরা উৎখাত করে দিয়েম সরকারকে। তারা নভেম্বরের ২ তারিখে দিয়েম ও তার তরুণ ভাইকে হত্যা করে। কাকতালীয় ভাবে এর ২০ দিন পরে প্রেসিডেন্ট কেনেডি আততায়ীর গুলিতে নিজ দেশে নিহত হন।
সূত্র: যায়যায়দিন, ১২/১০/২০০৬