দালি অ্যাটমিকাস

daliatomসালভাদর দালির পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি–দালি অ্যাটমিকাস ১৯৪৮; বিড়াল,পানি ও বস্তু সমাহারের পরাবাস্তব বিন্যাসে। ছবি. ফিলিপ হালজম্যান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে স্পেনের স্যুররিয়ালিস্ট আর্টিস্ট সালভাদর দালির (১৯০৪-১৯৮৯) চিত্রশিল্পে পরমাণুর উপস্থাপন দেখা যাইতে থাকে। তিনি প্রোটন ও ইলেকট্রনের মধ্যকার সম্পর্ক এবং সেই কারণে সব কিছুর এক অন্তহীন ঝুলন্ত অবস্থার আইডিয়া নিয়া ছবি আঁকতে থাকেন।

দালির বিখ্যাত পেইন্টিং লেডা অ্যাটমিকায় দেখা যায় লেডা তার রাজহাঁস ও চারপাশের বস্তুসমুদয় লইয়া শূন্যে স্থির। এই ছবি দিয়া উদ্বুদ্ধ হইছিলেন ফটোগ্রাফার ফিলিপ হালজম্যান। তিনি ১৯৪৮ সালে নিউ ইয়র্কের স্টুডিওতে দালির একটা শূন্যে স্থির হইয়া থাকা ছবি তুলতে চেষ্টা করেন।

ছবি তোলার আগে ইজেল, দালির দুইটা পেইন্টিং-এর ফটোগ্রাফ (যার একটা লেডা অ্যাটমিকা), একটা স্টেপ টুল সিলিং-এর লগে তার দিয়া ঝুলাইয়া দিলেন। ওনার ওয়াইফ নির্দিষ্ট দূরত্ব থিকা চেয়ারের একটা পা ধইরা রাখছিলেন যাতে মনে হয় চেয়ারও শূন্যে ঝুইলা আছে। এরপরে হালজম্যান ওয়ান টু থ্রি ফোর এইভাবে গুনতে বসলেন। থ্রি গোনার সঙ্গে সঙ্গে তার তিন সহকর্মী নির্দিষ্ট দূরত্ব থিকা তিনটা বিড়াল এবং বালতিভর্তি পানি তাঁর দেখানো পথে শূন্যে ছুইড়া দেন। পানিপ্রবাহ বক্রপথে এবং বিড়ালগুলি পাঁক খাইতে খাইতে যে মুহূর্ত তৈরি হইল তার মধ্যে তিনি ‘ফোর’ বললেন এবং সঙ্গে সঙ্গে দালি লাফ দিয়া মাধ্যাকর্ষণবিরোধী ভূমিকা (!) গ্রহণ করলেন! এভাবেই হালজম্যান তাঁর দালি অ্যাটমিকাস ছবিটা তোলেন।

ফিলিপ হালজম্যান (১৯০৬-১৯৭৯)
ফিলিপ হালজম্যান (১৯০৬-১৯৭৯)

হালজম্যান লিখছেন, এই ছবি তুলতে তাঁর ৬ ঘণ্টা লাগছিল। ২৮ বারের বার পছন্দের ছবি তুলতে সক্ষম হন তিনি। ছবিতে ফ্লোরের পানির অস্তিত্ব না থাকায় কেউ কেউ ছবির পানি বিষয়ে সন্দেহ ধইরা রাখছেন। তাদের ধারণা ফটোগ্রাফার পানির ছদ্মবেশে অ্যাক্রেলিক নাইলে রেজিন শুকাইয়া লইছিলেন। এছাড়া ছবিতে দালির সামনের ইজেলের মধ্যেকার বিড়ালের ছবি আর লাফ দেওয়া বিড়ালের লেজ ও থাবার গঠনের সমিলতার কারণে অনেকের সন্দেহ ফটোগ্রাফ তৈরি হওয়ার পরে দালি হয়তো ওই অংশে খানিক টাচ কইরা দিছিলেন।

আমেরিকার পশু নির্যাতন আইনের বাধার কারণে মোরগ না নিয়া তিন বিড়াল নিছিলেন তাঁরা এবং ছবি যেহেতু ইউরোপেও প্রচারিত হবে তাই দুধের অপচয় না কইরা পানি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন হালজম্যান। নাইলে হয়তো এই ছবিতে দুধ আর মোরগের ঝুলন্ত দশা দেখা যাইতো।

হালজম্যান প্রায় তিরিশ বছর দালির লগে কাজ কইরা গেছেন। তাঁর দালিস মুসটাস (Dali’s Mustache, Simon & Schuster, 1954) একটা ফটোগ্রাফির বই আছে। হালজম্যান বিশ্বাস করতেন যার ছবি তোলা হইতেছে তারে অবস্থান থিকা সরাইয়া নিয়া কিংবা গর্জিয়াস দৃশ্যাবলীর মধ্যে চালান কইরা দিয়া সাবজেক্টের চরিত্র তুইলা আনন যায় না। বরং সাবজেক্টের ম্যানারিজম আর মুদ্রাদোষের ভিতর দিয়াই ধরন লাগে তারে।

ledaatomicaলেডা অ্যাটমিকা, ১৯৪৭-৪৯; ক্যানভাসে তেল, ৬১.১ x ৪৫.৩ সেমি। সালভাদর দালি।

Flag Counter

Leave a Reply