অন্বেষণ

নাইনটিন নাইনটি ফাইভে আমি অন্বেষার সঙ্গে পরিচিত হই। একটি ঈদের দিনে ছফা ভাইয়ের বাসায় গেছিলাম। দুপুরে। দেখলাম ছফা ভাই ঘুমান। আমি পা ধোওয়ার নিমিত্তে পাশের ঘরে গেলাম। ধুলাবালিতে স্পঞ্জের স্যান্ডেলও ময়লা হইত তখন। দেখলাম ছোট গোছলখানার একটা পাশে বিছানো চকিতে সোজা হইয়া একটা মেয়ে ঘুমাইয়া। আমি পা ধুইতে ঢুকলাম। বাইর হইয়া দেখি—এক পাশে চুল নামাইয়া দিয়া বইসা আছে ভদ্র মেয়েটি—লম্বা কালো মাথাভরা চুল কোমর পর্যন্ত নামতেছিল। একটু মোটা—কিন্তু গা ফর্সা বইলা আমারে আকর্ষণ করলো। দেখি নড়ে না। তাকায় ছিলেন কি উনি? এতদিন পরে আর তাকানোটা মনে নাই।

অন্বেষার সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল অল্প দিনের। সব মনে নাই। পর দিন গিয়া দেখলাম ছফা ভাইয়ের একটা বেগনি সিল্কের শার্ট আর লুঙ্গি পইরা বোধহয় মোড়ায় বা ছোট টুলে বইসা আছেন অন্বেষা। হাসিতে উদ্ভাসিত মুখ। কিন্তু হাসেন না।

২.

অন্বেষা নিয়া বেশি বলার নাই। উনি নাচ শিখতেন তখন। দিনাজপুর থিকা পলাইয়া আসছিলেন, উঠছিলেন ছফা ভাইয়ের বাসায়। ছফা ভাইয়ের বেশ বেগ পাইতে হইছে ওনারে রক্ষা করতে গিয়া। অন্বেষা ছফা ভাইয়ের বাসায় ওঠার পরে তরুণ ও অনতিবয়স্ক সব কবি-সাহিত্যিকরা—আমরা—ঘন ঘন ছফা ভাইয়ের বাসায় যাওয়া শুরু করলাম। আগে সপ্তাহে দুই কি একদিন যাইতাম। এখন দেখি প্রতি দিনই ঘর ভরা লোক। একটা টেবিলের এক প্রান্তে ছফা ভাই, নাগরিক প্রান্তে আমি। বেতের সোফায় অন্যেরা। ছফা ভাইয়ের পাশে অন্বেষা। চা দিলে পরে আমি এই পাশের দরজা দিয়া আর অন্বেষা ওই পাশের দরজা দিয়া ঘুইরা ছফা ভাইয়ের বিখ্যাত ছাদে গিয়া দাঁড়াইতাম। চা খাইতে খাইতে যট্টুক আলাপ। এর মধ্যে ভিতর থিকা ছফা ভাইয়ের উচ্চকণ্ঠের হাক, রাইসু কোম্পানি, তোমার চা খাওয়া হইল!

আমরা, চা খাওয়া যেহেতু হইয়া যাইতো, গিয়া আবার বসতাম যার যার চেয়ার ও মোড়ায়—নাকি টুলে? এগারো সালে শুনলাম, অন্বেষা নাকি বিলাতে অন্বেষা কোম্পানি খুলছিলেন, একটা নাচের স্কুল।

৯/৮/১৩