অন্য সবার মতো আমরা হবো না।
আমাদের মুখ আমরা ঘষে ঘষে অন্য রকম করে ফেলতে হবে।
অন্য শত সহস্র জনের মতো হয়ে কোনো লাভ নেই।
আমরা হবো হয়ে গেছি অন্য রকম।
তা আমাদের লোহার মতন শক্ত মুখ দেখে বোঝা যাবে।
বোঝা যেতে হবে।
আমাদের মতো না যারা তারা বুঝবে এইসব।
তাদের দায়িত্ব বোঝা।
তাই মুখ শক্ত করে আমরা বসেছি।
হাড়ের কঠিন মুখ দৃঢ় ঋজু চক্ষু স্থির।
আমাদের ব্যক্তিত্ব অনেক।
ব্যক্তিত্ব অনেক আর আমরা মুখ শক্ত করে বসে আছি
ওরা বলছে, অনেক গম্ভীর!
ওরা তো বলবেই। কী আশ্চর্য ওরা
সদর রাস্তায় হাঁটে লুঙ্গি পরে। আমাদের দিকেও তাকায়—
সেই আইন চাই আমরা লুঙ্গি পরা কেউ যাতে না তাকায় আমাদের—
আমাদের মেয়েদের দিকে। যাতে
লুঙ্গির চেয়েও বেশি পয়সা দিয়ে বানানো রাস্তায়, বড়জোর
ফতুয়া পায়জামা পরে আমরা গান গাবো,
গান গাবো শুধুই মাত্রই আহা রবীন্দ্রসঙ্গীত। রবীন্দ্রসঙ্গীত,
তুমি যদি নাই থাকতে তবে আমরা কী গান গাইতাম?
কী গান গাইতাম আছে, এ ছাড়াও আমাদের ব্যক্তিত্ব অনেক।
ব্যক্তিত্ব এমন আমরা কোনোদিন লুঙ্গি পরি নাই।
লুঙ্গি আমরা পরি নাই এ জীবনে আমাদের প্রেমিকারা লুঙ্গি পরে নাই।
যদি লুঙ্গি পরে থাকা লোক দেখি অনেক সংকোচ।
মনে হয় এ দেশ আমার নয়, ওদের লজ্জায়—
শক্ত মুখ নত করে রাস্তা পার হই।
ওদের দেখতে পাই কেবলই রাস্তায়।
পথিমধ্যে জন্ম নেয়, পথিমধ্যে বেড়ে ওঠে,
পথিমধ্যে লুঙ্গি পরে, পথিমধ্যে আমাদের শান্তি নাশ করে!
আমাদের বাড়িঘর বারান্দা বা ছাদে
কোথাও লুঙ্গির কোনো আড্ডা নেই। আমাদের পরিবারে লুঙ্গির উচ্ছেদ
সমূলে করেছি আমরা। স্মার্টনেসে অভিষিক্ত আমাদের শিক্ষিত সমাজ।
কিন্তু ওরা প্রতিদিনই পথে পড়ে, আমরা ওদের দেখেও দেখি না।
আমাদের গম্ভীরতা বাঁকা হাসি সর্বত্র বাঁচায়—যেন ওরা নেই!
ওরা সমঝে চলে আমাদের। স্যার বলে ডাকে।
অনেক গম্ভীর আমরা হতে চাই,
এমনকি আমাদের চেয়েও আছে অনেক গম্ভীর।
পাল্লা দিয়ে পারি নাই তার ফলে আমাদের মধ্যে এলো ক্রুদ্ধ ভাব
এবং গম্ভীর।
ক্রুদ্ধ ভাব গভীরতা নষ্ট করে, আমরা হবো উদাসী গম্ভীর।
উদাসী গম্ভীর আমরা হয়ে ফেলবো কাফকা পাঠ করে।
বোরহেস পড়ার পর আহা! আমাদের মধ্যে এলো বিশ্বভাব
আমাদের দেখে বোঝে সেই সাধ্য কার?
(গুন্টার গ্রাসের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমার!)
এই দেশে অলটারনেটিভ আমরা হহিয়াছি,
আমাদের দেখেই যদি বোঝা গেল এমন সহজ আমরা কেন হবো?
আমাদের শক্ত মাথা শক্ত হাড় শক্ত জিহবা শক্ত ঘাড় শক্ত শক্ত শক্ত তবু
তবু আমরা চুপ থাকতে জানি!
ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া ৭/৯/০৩-২২/১০/০৩