আমি সিডনি গেছিলাম এপ্রিলের ২৫ তারিখে। ২৮ তারিখে ফিরছি। সুব্রত দা’র [সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ] বাসায় ছিলাম। ভালোই। অপেরা হাউস দেখাইতে নিয়া গেছিলেন। তারপরে একটা বীচেও গেছিলাম।
সুব্রত দা’র বাপমাবইন সকলেই সিডনি থাকে। দুই বইনের বড়জন আগে সিডনি যখন আইছিল, অস্ট্রেলিয়ান খ্রিস্টান (উনিও খ্রিস্টান) যুবকরে বিয়া কইরা পরে এহন অনেক দিন থিকাই এইখানে থাকে। তাঁর সন্তানাদির সকলকেই গড শাদা অস্ট্রেলীয় গাত্রবর্ণ দেওয়ায় উনি সুখি হইছেন। খাওয়া-দাওয়া (দাওয়া যদি গোসল হয় তবে তার খবর আমার রাখা অঠিক হয়) সবই নাকি অজিদের (মানে অস্ট্রেলাবাসীদিগের) মত করেন। সুব্রত (দা)-র বাপ বললেন তাতে নাকি আনন্দ অনেক।
আমি ওনাগো দুইজনরে (সু’র মাবাপ) কইছি, পোলারে দেশে পাঠান। আপনেগো বয়স বাড়ছে বইলা শান্তি চান, সেইটা অস্ট্রেলিয়ায় আছে; ছেলে তো আপনের সাহিত্য করে। তার দেশ দরকার, বন্ধুবান্ধবী দরকার। তারা আমার যাওয়া উপলক্ষে ভালো রান্নাবান্না করছিলেন। আঙ্কেল রানছিলেন বাইলা মত মাছ, সঙ্গে আলু ছিল। সালাদ কাটছিলেন। গরুর মাংস ছিল তরকারি হিসেবে। আন্টি চিংড়ি মাছ রানছিলেন। কিন্তু আমার বক্তব্যে ওনাদের শান্তি কিনচিৎ বিঘ্ন হইছিল। ওনারা যে আমারে আর ডাকবেন না, সে আমি বুঝছি। বোঝার পরে আমি আরো কিছু কথা ওনাদেরকে বললাম। বললাম, ঢাকায় আপনেগো বাড়ি আছে, সেইটা আপনেরা বেচতে চাইতেছেন কেন? আপনের পোলা মাইয়ারা গেলে কই থাকব? অস্ট্রেলিয়ায় এতেক শান্তি থুইয়া তারা যে দেশে যাইব না, এই ব্যাপারে তাদের তো বটেই, আমারও সন্দেহ নাই। খালি লেখক পোলারে নিয়া তাদের অস্বস্তি।
আংকেল বিক্রমপুর গেলে এখনও নাটক করেন। কইলেন, কেন্, তুমি তো আছোই। আরো যারা তোমাগো লেখক বন্ধু আছে তাদের অস্ট্রেলিয়ায় নিয়া আসো। আমি কইলাম, আমি তো আসছি এক বছরের লাইগা। আর লেখকরা এইখানে আইসা কী বাল ফালাইবো। অস্ট্রেলিয়ার নিজের লেখকরা আছে না।
আসলে বাল ফেলানোর কথাটা ওনারে আমি বলি নাই। এখন লেখতে গিয়া আসলো, থাকুক। নাকি কাটুম? অস্ট্রেলিয়ার নিজের লেখকরা থাকলে বাংলাদেশের লেখকরা এইখানে আসাতে কী ক্ষতি, তা নিয়া আংকেল কোনো প্রশ্ন আমারে করেন নাই। করলেও তার কী জবাব আমি দিতাম? বাংলাদেশের লেখকরা এইখানে না আইসা ওইখানে থাইকা কী বালটা ফালাইতেছে। দেখলাম বাল ফেলানোর প্রসঙ্গটা এইখানে বেশ যুইৎ মতো বসে। বেহুদা মুরব্বি ভদ্রলোকরে এই রকম অশ্লীল শব্দের মুখোমুখি না করাই ভালো। তায় তিনি সুব্রতদার জনক। আবার উনি আমাদের জন্যও রান্নাও করছেন। রান্না ভালোও হইছে।
এখন আমি অস্ট্রেলিয়া নিয়া আর কী লেখুম। কই কই গেছিলাম লেখন যায়। তা তো লেইখা মজা নাই। আমি তো আর ট্রাভেলার না। এমনকি ভ্রমণকাহিনীর লেখকও না। যে আমি লেখলাম আর ওই পইড়া কম পয়সায় পত্রিকা কিন্নাই দেশের লোকরা ভ্রমণ সারলো।
ব্রিসবেন, অস্ট্রেলিয়া, মে ২০০৩