(সিদ্ধার্থ হককে)
ঠাণ্ডা ও স্থির শীতকালীন পুকুরের অল্প গভীরে আমি শুয়ে আছি
মাছেদের অনুরোধে
মাছের সমাজ
জলতল ছেড়ে উঠতে আমাকে দেবে না
তারা চায় আমি স্থির শুয়ে থাকি চিৎ হয়ে—
কেননা আমার চিন্তা অল্পপ্রাণ, তাতে কিছু নাই
তাদের ঘোষণা—জলের গভীর চিন্তা অল্প জলে আমি করি
এই পাপ মাছের সরল জীবনধারা অ্যালাউ করে না
তারা চায় শুয়ে থাকা
অল্প গভীর কোনো পুকুরের তলদেশে, যার নাম নাই।
পুষ্করিনী ধরণীতে অসংখ্য অসংখ্য যার নাম নাই কিন্তু বহু তলদেশ আছে
আছে অল্প পানি ক্ষুদ্র প্রাণ পচা পাতা শামুকের খোল কিংবা
অবহেলা অকারণে মরে যাওয়া সুপ্রাচীন গোপন মাছেরা
কাঁটায় কাঁটায় তারা ঘুরিতেছে
জীবিত মাছের স্রোতে তাদের আভাস
অতি সূক্ষ্ম দেখা যায়
কাদার সমূহ স্তর এলোমেলো করে তারা উঠে আসে
নেমে যায়
ধীরে ধীরে ঘুরতে ঘুরতে
যেন তারা নাই
যেন তারা চলে গেছে—নিতান্ত শায়িত আমি
কোথা আছি
কেউ তা জানে না শুধু মাছেদের রাষ্ট্রযন্ত্র তটস্থ সমাজ
তারা জানে আমার স্ট্যাটাস
কিন্তু তাদের অত তাড়া নাই
কম্পাস দণ্ডের প্রায় শুয়ে থাকা মানব শরীরে
পরিত্রাণ দিয়ে যায় জীবিত মাছেরা—
তারপর উর্ধ্বে ওঠে
পুকুরের পৃষ্ঠ থেকে চর্তুদিকে নির্বাপিত লোকালয়ে বন্দি সব গাছ দেখতে যায়
তারা দূর আর নিচ থেকে গাছেদের বিশ্বরূপ দেখে
আবার নিকটে আসে
মাছেদের সন্তরণ দেখা ছাড়া আর পানি আছে
ঘোলা ও স্বচ্ছ রূপে একই জল
সূর্যালোকে বিধাতা বঞ্চিত আমি পানি দেখি
পানিদের নেমে আসা দেখি—দেখি
সূর্যালোক নেমে আসে পানিপথে তাই সূর্য দেখি বলা যায়, তাই বলা যায় আমি জীবিত বা মৃত
একান্ত জীবিত কিংবা মৃত আমি নই,
যদি ভাসমান কিন্তু শায়িত আমি পানির গভীরে
আমি যেন বা পাথর
পাথর বিষণ্ন কোনো নদীপথে সাঁঝবেলা
ঝরাপাতা স্তূপ। যেন সকলই আমার মধ্যে—আমি সব রূপ
আমি একা একা দেখা দেই, শীত গ্রীষ্ম শরৎ হেমন্তে আমি
নিজে দেখা দেই—পুকুরের তলদেশে
আরো বহু পুকুরের গোপন সন্ত্রাস পথে, যোগাযোগে, আমি ভাসমান
অল্প গভীর কোনো পানিদের তলদেশে,
আমার এই স্থির সন্তরণ
আত্ম ও অপর সব নিজ নিজ জলের গভীরে স্থিত ভাসমান শুয়ে থাকা নয়শো বছর
যেন কোনো মাছই আমি
প্রাগৈতিহাসিক কোনো শুয়ে থাকা পাথুরে নদীর
অথবা শ্যাওলা দলে শ্যামা পোকা কাঁপিতেছে
উর্ধ্বে কোনো জলযান
মলিন কাঠের তৈরি
আমার ওপরে।
বোমারু বিমান থেকে নিজেকে বাঁচাতে
আরো নিচে নামতে চায়
আরো বেশি অহিংসতা চায়,
যেন কোনো কচুরিপানাই কিংবা ঝোপের আড়াল তাকে রক্ষা করবে
এমন নিযুত আশা
আমার প্রতিই। কিন্তু দেখো, সব দৃশ্য আধা আধা—
আছে আর নাই যেন এক সঙ্গে অভিনীত
দর্শকবিহীন।
কিংবা আছে মহাকাল,
বেখেয়ালে দেখিতেছে,
পৃথিবীর ধ্রুব রূপ নিত্য বদলের—
অবিরাম খোলা চোখে এসবই দেখতে হচ্ছে,
তাই আমি দেখতে থাকি। হয়তো দেখি না—
হয়তো শুধু স্বপ্নে দেখি এইসব
যেহেতু পানির মধ্যে, নিচেও তো, তাই মাছ স্বপ্নে দেখা দেয়—
অথবা বাস্তব তাই মাছের ভাষায়, কথা বলে, সঙ্গ দেয়
কিন্তু সবই আবছা আবছা, জলীয় টলীয়—
আমার শায়িত এই জীবদেহ, জলমধ্যে
মাছের বাহিনী
মারে ও জীবিত রাখে
ঠুঁকরে দেখে যায়
কীভাবে বা প্রজাতি বদল ঘটে তাদের পরীক্ষাগারে,
কীভাবে জটিল জৈববস্তু—চিন্তাশীলও—গভীর জলের মধ্যে
চেতনা হারায়।
৬ ডিসেম্বর ২০১৫