আমি কেন ‘স্যার’ বলি

আমি এখনও অনেকরেই ‘স্যার’ বইলা ডাকি। কোনো অফিসে গেলে বড়কর্তাদের স্যার বলি। এমনকি ডাক্তারদেরও স্যার বলি। খুব যে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা ক্ষুণ্ন হইয়া বলি তা না।

মানে যাদের হাতে আমার ক্ষতি করার বা উপকার না করার লাঠি বা বেত থাকবে আমি তাদেরকে ‘স্যার’ বলতে রাজি আছি।

বলারে আমি করার চাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে চাই না। জবান কাজের চাইতে গৌণ বিষয়। কাজ একটা সামগ্রিক বিষয়—জবান খণ্ড খণ্ড। একটার সঙ্গে আরেকটার মিল নাও থাকতে পারে, উল্টা বা পরস্পরবিরোধী হইতে পারে আমাদের কথাগুলি।

আমি কে বা কী বা কেমন তা আমার বলার মধ্যে নাই। করার মধ্যে আপনি আমারে পাইবেন।

এগুলিরে না বোঝা লোকেরা হিপোক্রিসি বলবে। আরো অনেক টার্ম আছে ওনাদের পকেটে।

ধরেন, ড. হুমায়ুন আজাদ—ওনারে আমি ‘স্যার’ ডাকতাম। এবং এখনও যাতে অশ্রদ্ধা প্রকাশিত না হয় সেজন্যে শুরুতে ‘ডক্টর’ ডাইকা লইলাম। বা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ—ওনারেও ‘স্যার’ ডাকি।

কেন ডাকি? কারণ, ওনারা তো আমার কাছে আসেন নাই, আমিই ওনাদের কাছে গেছি, তাই না? তারা যদি ‘স্যার’ চর্চার মানুষ হন—আমি ওনাদের এই স্যার চর্চারে হেয় চোখে দেখতে পারি বড়জোর, এবং দেখিও—কিন্তু ওনাদের ‘ভাই’ ডাইকা অপমান করতে পারি না। কেন করব?

আমার ‘স্যার’ না ডাকার বিপ্লবের সঙ্গে ওনাদের কাছে ছুইটা যাওয়ার উদগ্রীব অবস্থাটা মিলে না। আমার ওনাদের কাছে যাওয়াটাই বোঝায় যে আমার ওনাদেরকে ‘স্যার’ ডাকতে হবে। যেহেতু ওনারা স্যার হইয়াই বইসা ছিলেন, আমার যাওয়ার আগে থিকাই।

আমি অবশ্যই ‘স্যার’ কালচারের বিরোধী। কিন্তু ‘স্যার’ না ডাকার মধ্যে সেই কালচারের উৎখাত নাই।

অনেকে ব্যঙ্গ কইরা নিচু পেশার লোকদের স্যার ডাকতে চায়। জোর কইরা কায়িক পরিশ্রম অলা মানুষদের “স্যার” বলতে চায় সমাজের গাইড়া বসা ‘স্যার’গুলিরে উপহাসের মাধ্যমে এক পঙ্‌ক্তিতে নামাইয়া আনার জন্য। আমি এই কাজরে ন্যায্য মনে করি না। কারণ এর দ্বারা ছোটলোকদেরই বরং অপমান করা হয়।

আপনারা যারা ছফা ভাই, ফরহাদ ভাই বলেন—এগুলির মারফতেও কিন্তু ‘স্যার’ই ডাকা হয় আসলে। সম্মান জানানোর মাধ্যমে “আমি তোমার অধীন” এইটা অনুচ্চ স্বরে বলা হয়। তা যতই স্মার্টলি আমরা বলি না কেন।

এবং অধীন যে না তা প্রমাণ করার জন্যে অনেকে বই, টার্ম, অ্যাটিচিউড আর টোন লইয়া ঝাপাইয়া পড়ে। এবং যদি মতে না মিলে তবে তো আর কথাই নাই!

এগুলি “স্যার” বা “ভাই” কালচার নিরসনের কোনো উপায় না। আমাদের নিজেদের মধ্যেই ‘স্যার’ বা ‘ভাই’ না শোনার সামর্থ্য বা সম্পর্ক সূত্রগুলি আগে গইড়া উঠতে হবে। যদি না হয়?

তবে এই রকমই চলবে। তাতে কী সমস্যা?

১০/৮/২০২৩

Leave a Reply