উৎসর্গ: বঙ্গেতে জন্মগ্রহণকারী বিবিধ ভাষাভাষীদের
‘মধ্যযুগের’ কবি আব্দুল হাকিম লেইখা গেছিলেন:
যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ
সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন ।
যে সব বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি ।
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুয়ায়
নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশে না যায় ।
‘মধ্যযুগ’ হিসাবে ওনার কবিতা ঠিক আছে। এই যুগে আইসা অচল। ওনারে দিয়া উদ্বুদ্ধ হইয়াই কিনা জানি না শেখ মুজিব তার জীবনে স্বৈরাচারী ওই আওয়াজ তুলছিলেন যে মুক্তিযুদ্ধের পর থিকা বঙ্গের সকলেই (সকল জাতিগোষ্ঠীই!) নাকি বাঙালি। বা এই ধরনের কোনো বাক্য। সঠিক বাক্যটা পাইলে ওইটা এইখানে অ্যাড করুমনে।
আব্দুল হাকিমের কথা থিকা বোঝা যায় উনি চাইছিলেন এক দেশে এক বাক্য চালু থাকুক। অন্য বাক্য যারা কয় হেগো জন্ম লইয়া উনি সন্দেহ কইরা গেছেন। সাধু জন্ম সব কালেই সমাজে গ্রহণীয়। যিনি সাধু জন্ম আশা করেন তিনি অবিমিশ্রিত সাধু বাক্য আশা করবেন, সাধারণ ঘটনা।
আমি ভাবতেছি সব কালেই বুদ্ধিজীবীগো থিকা যে জনতা আগাইয়া থাকে এর রহস্য কী! একটা কজ হইতে পারে বুদ্ধিওয়ালারা অতীতের লগে জোর বাঁধতে গিয়া পাবলিকরে আটকাইয়া দেয়। আব্দুল হাকিমের আমলে যে পাবলিকে খালি এক বাক্য কয় নাই এক ভাষায় দিন গোঁয়ায় নাই সেইটা মানুষের সাধারণ বোধের উপরে স্বস্তি জাগায়। এখনও নিশ্চয়ই জাফর ইকবাল বা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারদের নিপাট অবিমিশ্রিত বাংলা ভাষায় কথা কওনের এলিটিস্ট উগ্র জাতীয়তাবাদী ধারাটা পাবলিকে খাইব না। অলরেডি টেলিভিশনে নাটকে শুদ্ধ ভাষার গোয়া মারা শুরু হইছে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হইলেই বাঁচোয়া।
বঙ্গেতে জন্মি যেন যার যেমনে খুশি সেই ভাষায় কথা কইতে পারে, চাইলে চাইরটা ভাষা মিশাইয়া কথা কইতে পারে, চাইলে চুপও থাকতে পারে আব্দুল হাকিমের আত্মার কাছে সেই কামনা।
রচনা: ৫/২/২০০৭