রাইসুর ৫০তম জন্মদিনে ওনাকে নিয়া কিছু লেখা পড়ছিলাম। জাস্ট চোখ বুলানোর মত কইরা। ওনাকে নিয়া লিখতে চাইলেও হইয়া ওঠে না। লিখছি কয়েকবার। কিন্তু প্রতিবারই মনে হয়, একই একঘেয়ে জিনিস দাঁড়াইতেছে।
লেখাগুলি অনেক বেশি ‘ভালো মানুষ’ রাইসুকে নিয়া আর কম ‘প্রভাবশালী’ রাইসুকে নিয়া। প্রত্যেকেই যারা লিখতেছেন, রাইসু যা তাকে অনেক ছোট কইরা তারা দেখতেছেন এবং পোর্ট্রেও করতেছেন সেই ভাবেই। রাইসু কেমন, কী আচরণ তার, কী কী ভালো দিক তার, মানুষ হিসেবে সে কেমন—এইসব খুবই হালকা বস্তু।
কেউ রাইসুকে বলতেছেন সাহসী, কেউ উইয়ার্ড, কেউ সৎ, কেউ অসম্ভব ভালো মানুষ, বুদ্ধিজীবি, দার্শনিক—কিন্তু এত এত কথার মধ্যে কোথাও রাইসু’র পাওয়ারটা নাই। সে যে চাইলেই যেকোনো কিছু থ্রি সিক্সটি উল্টায়া দিতে পারে যাতে মনে হবে বিষয়টা আগের জায়গাতেই আছে, কিন্তু ততক্ষণে ভিতর থেকে চেঞ্জ হয়ে গেছে—এইটা কেউ বলতেছেন না। বা বুদ্ধিজীবী হিসেবে রাইসু কেন গুরুত্বপূর্ণ, তার সামাজিক প্রভাবগুলি কী কী, রাইসুর টাইমটা কেন গুরুত্বপূর্ণ কিছুই বলেন না।
রাইসুকে জাস্ট বেটার বলা, গ্রেট বলা হেন-তেন তার সবচেয়ে বড় হওয়াকে সবচেয়ে প্রভাবশালী হওয়াকে এড়ায়া যাওয়া।
আপনি তাকে ভালো বলতেছেন, জোর দিয়া তার শ্রেষ্ঠত্বের কথা দাবি করতে পারতেছেন না।
এর দুইটা দিক আছে। প্রথমটা আমি বলব না। দ্বিতীয়টা হচ্ছে, একটা চরিত্র বা ঘটনা গইড়া ওঠে ঠিক সেইভাবে যেইভাবে তার কমিউনিটি তাকে নেয়। এমনকি তা প্রচারও করবে কিন্তু তারা তেমন ভাবেই। অসংখ্য কম গুরুত্বপূর্ণ আচরণ ও কথা, নিছক তার বেসিক মানবিক বৈশিষ্ট্য, বা সারল্য বা হাসি বা উইট’ই ‘তিনি’ হইয়া উঠতেছেন। এইটা দুঃখজনক।
অর্জয়িতা রিয়া
আমার দেখা মানুষদের মধ্যে রাইসু সবচেয়ে সাধারণ। তার পাটিতে বইসা খাওয়া, গরম ভাত খাওয়া, কাজের লোকেদের জন্যে ডিম বরাদ্দ করাকে মহা মানবিক ব্যাপার হিসেবে চালানোর একটা বিষয় আছে। কেন জানি না। পাটিতে বইসা খাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। রাইসু মহামানব হয় না পাটিতে বইসা। এইটা উনার লাইফস্টাইল মাত্র।
আর যে কাজের লোকেদের খাওয়ান উনি, তা তো স্বাভাবিকই। এই জিনিস নিয়া মানুষের ওয়াওগিরি থাকার মানে তারা বা অন্যেরা কাজের লোকেদের খাইতে দেয় না।
রাইসু কী প্রকারে পলিটিক্স করেন তা লোকে বোঝে কিনা জানি না। উনি নিজেই যদিও তা ক্লিয়ার করেন, তারপরও অন্যেরা ঘুলায় গিয়া কখন পলিটিক্স করতেছেন আর কখন না সেইটা বুঝতে পারে না। এমনকি এও বলতে দেখছি, রাইসু যা, তা হওয়ার চেষ্টা কইরা হইয়া আছে।
তারা রাইসুর চিন্তা, সাহিত্য, ছোট ছোট ঘটনাকে আলাদা আলাদা ভাবে ঘটনা আকারে দেখতে পাওয়া, ঘটনা দেখতে চাওয়ার জন্যেই যে তার সাবজেক্টের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, বিশেষত সবকিছু চাইলেই যে তার শেষ কইরা দিতে পারার, বদলায়া দিতে পারার ক্ষমতা সেইটা’র আনন্দ তারা কখনোই পাইল না, হায়!
তা ওনাকে নিয়া লেখাগুলি পড়লেই বোঝা যায়। কত তুচ্ছ জিনিস দিয়া তারা ওনার সঙ্গে মেশার সময়গুলি পার করছে বা করে।
ওনার সাহস, স্পষ্টবাদিতা, খোঁচাকে ওনার বিশেষত্ব ধরার প্রবণতা দেখা যায়। ওনার যেকোনো সরল এবং স্বতস্ফূর্ত প্রকাশগুলিও তারা ওনার চেষ্টা হিসেবে দেখেন। বিষয়টা হতাশাজনক।
আরেকটা সমস্যা হইল রাইসুর উইট বুঝতে পারে না তারা। উইটটাকে জাস্ট হাস্যরসের মধ্যে নিয়া আসে। ওনার বুদ্ধিমত্তা এবং আবারো সেই স্বতস্ফূর্ত রেসপন্সকে মাইনাস কইরা একটা ঠাট্টামূলক হালকা চরিত্র আকারে পোর্ট্রে করে। যেইটা সে না।
যারা আপনাকে আপনার বিউটি দিয়া ভালোবাসে, রাইসু, তাদের নিয়া অত সমস্যা নাই, তারা আপনার ইন্টেলেকচুয়ালিটির দিকে নাই আর যাবেও না। কিন্তু যারা আপনার বুদ্ধিমত্তার জন্যেই আপনাকে ভালোবাসে বলে এই বিষয়গুলি ওনাদের ভাইবা দেখা উচিত আমি মনে করি।
কারণ তারা যে শুধু মনে করতেছে আপনাকে এমন তা তো না, আপনার খণ্ডিত অংশকে পূর্ণাঙ্গ ভাবতেছে এবং তা প্রচারও করতেছে। তা আপনার ক্ষতিই করতেছে আল্টিমেটলি। আপনি কী কী কখনোই আসতেছে না। জিনিসটা অসম্মানেরও, আপনার মত চরিত্রগুলির জন্য।
তাদের দেখা দেখা না—এরকম বলতেছি না। কিন্তু স্ট্রাকচার যদি এইটা হয়, আরো অন্য অনেকের সঙ্গেই আপনাকে ঘুলানো যাবে তাইলে।
সেইক্ষেত্রে দেখা সমস্যাজনক। আপনি কী এবং আপনার যে কোর বৈশিষ্ট্যগুলি, অন্যদের লেখায় পাওয়া যায় কম।
আর এর বাইরে যেহেতু আপনার ছোটকালের কিংবা ঘনিষ্ঠ বন্ধু বা লোকেরা বিশেষ বলতে চায় না আপনাকে নিয়া, বোঝা যায় না ইন্টেলেকচুয়ালিটির বাইরে আপনার ক্যারেক্টারকে নিতে হইলে এর কোন কোন জিনিসগুলি নিতে হবে।
আপনার সঙ্গে মিশার আনন্দেই জাস্ট থাকেন, যাদেরকে আপনার সঙ্গে মিশতে দেখছি। আপনাকে কাছ থেইকা দেখতে পাওয়ার যে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তারা আছেন, এইটা এখনো উপলব্ধি কইরা উঠতে পারেন নাই। এমন কিছু অলৌকিক পরিবর্তন লাগবে তাদের যে তারা হঠাৎ একদিন ঘুম থেইকা জাইগা বুঝতে পারবে আপনি সোসাইটিতে কী কী চেইঞ্জ আনছেন, এবং কীপ্রকারে আনছেন।
ঢাকা, নভেম্বর ২০১৯
1 Comment
Add Yours →ভালো লাগলো পড়ে