আমি ব্যক্তিগত ভাবে কাছের মানুষের মৃত্যুতে তেমন দুঃখ পাই না। আমার দাদির কাছ থিকা এই শিক্ষা আমি পাইছি। মনে হয় আব্বাও পাইছিলেন। দাদি আশপাশের মানুষ মরলে দেখতেও যাইতেন না। বলতেন, মানুষ তো মরবই!
আমার দাদা মারা গেছেন হয় ছিয়াশি নাইলে ঊনানব্বই সালে। আমি তখন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে দাদাবাড়িতে বেড়াইতে গেছিলাম।
দাদা মারা গেছিলেন সন্ধ্যার পরে। একলা একটা ঘরে মারা গেছিলেন উনি। দুসম্পর্কের এক ফুপু তারে মৃত অবস্থায় প্রথমে দেখতে পান। তিনি চীৎকার দিয়া উঠলেন, জ্যাডায় তো আর নাই!
আমরা হারিকেন জ্বালাইয়া আরেকটা ঘরে গল্প করতেছিলাম। মৃত্যুর আগে কী একটা অসুখে উনি ভূগতেছিলেন। ওনারে তেমন মনোযোগ দেওয়া হয় নাই। অসুস্থ ছিলেন বইলা সেই সময় আমিও খুব কাছে ভিড়ি নাই ওনার। এমনকি এখনও আমি জানি না কী হইছিল ওনার। আমার তখন তো কম না বয়স। ঊনিশ বা বাইশ। কিন্তু আমরা এই রকমই ছিলাম।
দাদার মৃত্যুর পরে দাদিরে কানতে দেখি নাই। উনি প্রথমেই যা করলেন—সবুজ বা নীল, এখন আর মনে নাই, শাড়ি বদলাইয়া সাদা একটা শাড়ি পরলেন।
পরদিন আব্বা-আম্মা ভাইবোনরা বাড়িতে আসল। দেখলাম আব্বা কর্তব্য কাজগুলি করতে ধরলেন। উনি কান্নাকাটি করছিলেন তেমন মনে পড়ে না। এবং আমিও কান্দি নাই। আমারে আব্বা পাঠাইলেন টাঙ্গাইলের এলাসিনে। ফুুপুরে নিয়া আসতে। ফুপুদের বাসায় ফোন নাই। খবর দেওয়া যাইতেছে না।
দাদারে কবর দেওয়ার অনুষ্ঠানে থাকা হয় নাই আমার। একলা একলা টাঙ্গাইল যাইতে হইল। ফুপু আসার আগেই দাদারে কবর দেওয়া হইয়া গেছিল। যেন এই সবই স্বাভাবিক—এই ভাবেই আমরা ভাবতে শিখছিলাম।
পরে আমার দাদি মারা গেছেন ২০০৬ সালে। আমি কোনোদিন ওনারে দাদার কথা বলতে শুনি নাই। এমন না যে ওনাদের সম্পর্ক খারাপ ছিল। আগেরকার পারিবারিক সংস্কৃতি হয়তো এই রকমই ছিল। বা আমি হয়তো ডিটাচড ছিলাম সবার থিকাই।
দাদি ওনার নিজের আসন্ন মৃত্যুরেও খুব স্বাভাবিক ভাবে নিছিলেন।
আমি তখন পান্থপথে স্কয়ারের উল্টাদিকের ষোলো তলার বাসাটায় থাকতাম। একদিন শুক্রবারে হইতে পারে, বাড্ডায় গেছি আব্বা-আম্মার বাসায়। দাদি একটা রুমে শুইয়া ছিলেন দুপুরবেলায়। আমি ওনার ঘরে ঢুকতেই শোয়া থিকা উইঠা বসলেন। ডাইকা কাছে বসতে বললেন। বিছনায় বসতেই আমার হাত ধরলেন ওনার শুকনা দুই হাত দিয়া। বললেন, বাই রে খবর আইয়া পড়ছে। আর দেহা অইত না।
এর কয়েক দিন পরে কুমিল্লা গেলেন তিনি। সেইখানে মারা গেলেন।
১৩/৩/২০১৬
1 Comment
Add Yours →আমার বড় ভাইয়ের কবরের একটা পিক আব্বা ধরায় দিলো একদিন।
একবারেই নেই একথাটা আমি মন কোনমতেই স্বীকার করতে পারি নাই,, না অখন না তখন।
আমি মনে করি চিরতরে নাই,,, কখনো তাকে স্বীকার করবার দরকারটা কী?
থাকা ব্যাপারটাই কত বৈচিত্র্যই আছে। কখনো ঘুমিয়ে থাকে,, কখনো জেগে থাকে,, কখনো কাছে থাকে-কখনো দূরে থাকে-কখনো দৃশ্যে কখনো অদৃশ্যে,,,
মৃত্যুকে শেষ ভাবছি বলে মনে করছি খুব সম্ভব তার কারণ এই যে, সে যে বিলোপ নয় তার প্রমাণগুলো আমাদের হাতের কাছে নেই-হয়তো কেবল বৃথা বিলাপ করেই মরছি।
“‘জীবনেরে কে রাখিতে পারে, আকাশের প্রতি তারা ডাকিছে তাহারে।'”
Dear bro.,..
বেসম্ভ লাত্থি খাবা খালি আমি এইসা নেই একবার তোমার কাছে।